দিতিপ্রিয়া রায় একজন জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি মূলত বাংলা টেলিভিশন শো এবং ফিল্মে কাজ করেন। তার অভিনয় দক্ষতা এবং চমৎকার স্ক্রিন উপস্থিতি তাকে বাংলা মিডিয়া শিল্পে একটি বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে। তিনি বিশেষত "খরাজা ফারিয়াদ", "লকডাউন" এবং "মোহর" মত জনপ্রিয় সিরিয়ালে তার ভূমিকার জন্য সুপরিচিত।

দিতিপ্রিয়া রায়ের জন্ম তারিখ ১৯৮৯ সালের ২৯শে জুন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা-মায়ের নাম সুনিতা এবং দেবাশীষ রায়, যারা তার ক্যারিয়ারের শুরুতেই তাকে সমর্থন করেছেন।

দিতিপ্রিয়া রায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের নাটকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন, যা তার অভিনয় জীবনের ভিত্তি তৈরি করেছিল। পরে, তিনি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থিয়েটারে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও লাভ করেছেন।

দিতিপ্রিয়া রায়ের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে রয়েছে:

- "খরাজা ফারিয়াদ" টেলিভিশন সিরিয়াল, যেখানে তিনি একজন দুঃসাহসী বধূর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন

- "লকডাউন" সিরিয়াল, যা COVID-19 মহামারীর সময় তার নেতিবাচক চরিত্রের জন্য ভক্তদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল

- "মোহর" সিরিয়াল, যেখানে তিনি একজন যুবতী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন

- চলচ্চিত্র "স্নেহে খুনি" এবং "সে যেখানে পথ" ইত্যাদি, যেখানে তিনি মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

দিতিপ্রিয়া রায় তার অসামান্য অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন, বিশেষত বাংলা টেলিভিশন শিল্পে। তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে:

- কলাকার পুরস্কার (Kalakkar Award) তার সেরা অভিনেত্রীর জন্য

- বিএফজেএ পুরস্কার (BFJA Award) তার সেরা টেলিভিশন পারফরম্যান্সের জন্য

- টেলি সাম্মান পুরস্কার (Tele Samman Award) জনপ্রিয়তা এবং সামাজিক অবদানের জন্য

তিনি ২০২২ সালে জি বাংলা সোনার সংসদ পুরস্কারেও (Zee Bangla Sonar Sansad Award) মনোনীত হয়েছিলেন।

দিতিপ্রিয়া রায় তার ব্যক্তিগত জীবনে খুব ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখেন। তিনি এখনও অবিবাহিত এবং শুধু তার ক্যারিয়ারের দিকে মনোনিবেশ করছেন বলে জানা গেছে। তার শখগুলির মধ্যে নাচ করা, গান গাওয়া এবং ভ্রমণ করা উল্লেখযোগ্য; তিনি প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভ্রমণ ছবি শেয়ার করেন। তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংস্থার সাথে যুক্ত, বিশেষত শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে।

দিতিপ্রিয়া রায় ইনস্টাগ্রাম (@diti_priya_official) এবং টুইটার (@DitiPriya_Roy) এ খুব সক্রিয়, যেখানে তিনি তার দৈনন্দিন জীবন, সেটের পিছনের মুহূর্ত, এবং ভক্তদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন শেয়ার করেন। তার প্রায় ১.২ মিলিয়ন অনুসারী ইনস্টাগ্রামে রয়েছে। তিনি নিয়মিত লাইভ সেশন করেন, প্রশ্নোত্তর সেশনে অংশ নেন, এবং বিভিন্ন চ্যারিটি ইভেন্ট সম্পর্কে প্রচার করেন, যা তাকে তার ভক্তদের কাছে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে।

দিতিপ্রিয়া রায় সাম্প্রতিক সময়ে "প্রেম আবার এসেছে" নামক একটি নতুন বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করছেন, যেখানে তিনি একটি রোমান্টিক-ড্রামা চরিত্রে নায়িকার ভূমিকায় আছেন। এটি শীঘ্রই প্রচারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি একটি নতুন বাংলা ফিল্ম "অনবরত" তেও কাজ করছেন, যা একটি সামাজিক বার্তামূলক চলচ্চিত্র এবং ২০২৪ সালের শেষ দিকে মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পগুলির পাশাপাশি, তিনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রমোটার হিসেবেও যুক্ত আছেন।

হ্যাঁ, দিতিপ্রিয়া রায়ের একটি বিশাল ভক্ত গোষ্ঠী আছে, যেমন "দিতিপ্রিয়া ফ্যান ক্লাব", যা ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয়। এই গোষ্ঠীগুলি নিয়মিত মিট-আপ আয়োজন করে, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালায় এবং তার জন্মদিনের মতো বিশেষ উপলক্ষে ইভেন্ট করে। তার ভক্তরা তাকে প্রায়ই "দিদি" নামে ডাকে এবং তার কাজের প্রতি অটুট সমর্থন দেখায়। ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তিনি প্রায়ই ফ্যান মেইল পাঠান এবং অনলাইন কুইজে অংশ নেন।

দিতিপ্রিয়া রায় অভিনয় ছাড়াও গান গাওয়া, মডেলিং এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। তিনি একটি প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে বিভিন্ন বাংলা গান রেকর্ড করেছেন, যেমন "তোকে চাই" এবং "আকাশের তারা"। ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে তিনি ফ্যাশন এবং বিউটি প্রোডাক্টের ডিল করেছেন, যেমন লাক্স এবং গার্নিয়ারের মতো কোম্পানির সঙ্গে। সামাজিকভাবে, তিনি NGOs যেমন CRY (Child Rights and You) এর সাথে যুক্ত, শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সমস্যায় কাজ করেন। তিনি পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানেও জড়িত।

দিতিপ্রিয়া রায়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অভিনয়ের পাশাপাশি ফিল্ম ও প্রোডাকশনের দিকে প্রসারিত করা। তিনি তার নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস শুরু করার পরিকল্পনা করছেন, যাতে নতুন প্রতিভাবান অভিনেতাদের সুযোগ দিতে পারেন।

তিনি বলিউডে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন এবং কয়েকটি হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্মের চরিত্রে অডিশন দিচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে, তিনি আরও লেখালেখি এবং ভ্রমণের মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করতে চান।